ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫ , ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মা পর্দা না করলে কি ছেলের গুনাহ হবে?

আপলোড সময় : ০৬-০১-২০২৫ ০৯:২৬:৩৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৬-০১-২০২৫ ০৯:২৬:৩৭ অপরাহ্ন
মা পর্দা না করলে কি ছেলের গুনাহ হবে? মা পর্দা না করলে কি ছেলের গুনাহ হবে?
প্রশ্ন: আমার মা সরকারী চাকরিজীবি। আমার বয়স এখন ২৩, মায়ের ৪৩-৪৪। আমার বয়স যখন ১, তখন থেকে চাকরি করেন। চাকরিতে পুরুষ কর্মীও আছে, আবার নারী ও আছে, পুরুষদের সঙ্গে কথা বলতে হয় চাকরি ক্ষেত্রে, প্রয়োজনে নারী পুরুষ একসঙ্গে মিটিং হয়, মিটিংয়ের দায়িত্বে আমার মা, যেহেতু মা সেক্রেটারি,তাই। আমার আব্বা দুই বছর হল মারা গেছেন। আমি একটা ছাত্র কলেজে পড়ি, আমি একটাই ছেলে। আমার ইনকাম নেই।শুনেছি এমন চাকরি করা যাবেনা যেহেতু পুরুষ আছে। এখন অমি কি দাইয়ুস হয়ে যাবো?

উত্তর: ইসলাম বিশ্বজনীন এক ‍চিরন্তন ও শাশ্বত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামে রয়েছে নারীর সম্মান, মর্যাদা ও সকল অধিকারের স্বীকৃতি, রয়েছে তাদের সতীত্ব সুরক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক কর্মসূচী। তাদের সম্মান, মর্যাদা ও সতীত্ব অক্ষুন্ন রাখতেই ইসলাম তাদের উপর আরোপ করেছে হিজাব বা পর্দা পালনের বিধান। 

মূলত ‘হিজাব বা পর্দা’ নারীর সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক। নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচ। নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায়। 

এ বিধান অনুসরণের মাধ্যমে হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’ (সূরা আহযাব: ৫৩)


ইসলাম পর্দা পালনের যে বিধান আরোপ করেছে তা মূলত অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্টতা ও ফেতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার নিমিত্তেই করেছে। নারীদের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার কিংবা বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করেনি। 

নারী-পুরুষের মিশ্রিত পরিবেশে কাজ করতে গেলে পর্দাহীনতা, পারস্পরিক সহাবস্থান, অন্তরের আকর্ষণসহ সমূহ ফেতনার আশঙ্কা প্রবল থাকার কারণে ওলামায়ে কেরাম এজাতীয় পরিবেশে কাজ করাকে নাজায়েজ বলেছেন। 

আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটির ফতওয়া সংকলন ফাতাওয়াতুল লাজনাতিতদ্দায়িমা (১২/১৫৬)-তে এসেছে, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ও অন্যান্য স্থানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান ঘটলে দীন ও দুনিয়ার ক্ষেত্রে বড় বড় ফেতনা-ফ্যাসাদ ও পাপাচার সংঘটিত হবে। সুতরাং নারীর জন্য জায়েজ নয় নারী-পুরুষের মিশ্রিত পরিবেশে শিক্ষকতা কিংবা চাকরি করা। আর অভিবাবকের জন্য জায়েজ নয় তাকে এর অনুমতি দেয়া।’

 

সুতরাং আপনার মা যদি চাকরি করতে চান তাহলে তাকে এমন পরিবেশ গ্রহণ করতে বলুন, যেখানে নারীদের আলাদা ব্যবস্থা আছে। অন্যথায় এ চাকরি ছেড়ে দিতে বলুন। কারণ, পার্থিব উন্নতি অর্জনের চেয়ে দীনদারি রক্ষা করার গুরুত্ব অবশ্যই বেশি। 

যদি তিনি এমনটি করতে পারেন তাহলে আল্লাহ তাআলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। (সূরা তালাক ২,৩)

আর যদি আপনার মা ওই মিশ্রিত পরিবেশে চাকরি করতেই চান কিংবা এ ছাড়া যদি তার প্রয়োজন পূরণের ফেতনামুক্ত বিকল্প ব্যবস্থা না থাকে তাহলে তাকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলার পরামর্শ দিন,

১- তিনি ওই পরিবেশে আল্লাহ তাআলাকে যথাসাধ্য ভয় করে চলবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)

২- পর্দা পালন, নেকাব পরিধান, হাত মোজা পরিধান, নির্জনবাস না ঘটা, পুরুষদের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা-সহ ইত্যকার শরিয়তের যাবতীয় বিধান মেনে চলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবেন।

৩- পরপুরুষের সঙ্গে প্রয়োজনে কথা বলার ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হল, কণ্ঠস্বর কঠোর রাখা, সুমিষ্ট মোলায়েম স্বরে না বলা। সুতরাং তিনি ইসলামের এই মূলনীতি মেনে চলবেন। 

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, তবে পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। (সুরা আহযাব৩২)

এই আয়াতের তাফসিরে আছে, আয়েশা রা. এর নিকট মাসয়ালা বা হাদিসের প্রয়োজনে অন্যান্য সাহাবীরা আসলে, তিনি কণ্ঠ বিকৃত করে কথা বলতেন যেন কারো অন্তর ব্যাধিগ্রস্থ না হয়। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

যদি আপনি আমাদের উপরোক্ত পরামর্শ মেনে চলেন এবং আপনার মায়ের মিশ্রিত পরিবেশে চাকরি করাটাকে পসন্দ না করেন তাহলে আশা করা যায়, আপনি দাইয়ুসের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। 

কেননা, দাইয়ুসের পরিচয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ওই ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে, তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়। (মুসনাদে আহমাদ ৫৩৭২)

একারণে ইবনু হাজার হাইথামি রহ. বলেন, ‘আলেমগণ বলেছেন, দাইয়ুস বলা হয়, যে নিজের পরিবারের অশ্লীলতার ব্যাপারে দায়িত্ববোধহীন বা আত্মমর্যাদাহীন।’ (আযযাওয়াজির ২/৩৪৭)

নিউজটি আপডেট করেছেন : NewsUPload

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ